অধ্যায়-৯ ‘বাংলাদেশের দুর্যোগ’
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশে রয়েছে অধিক জনসংখ্যা। তাই জনসংখ্যা আজ এক নম্বর সমস্যা। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি নীতি প্রণয়ন করা হয়। এই নীতির লক্ষ্য হলো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে দেশের নাগরিকদের জীবনমানের উন্নতি এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা, জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা।
ক. বাংলাদেশের জাতীয় জনসংখ্যা দিবস কত তারিখ?
খ. জনসংখ্যা ও উন্নয়নের পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
গ. বাংলাদেশ সরকারের জনসংখ্যা নীতির মূল দিকগুলো চিহ্নিত করো।
ঘ. জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার কৌশল বিশ্লেষণ করে লেখো।
উত্তর: ক. প্রতিবছর ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় জনসংখ্যা দিবস পালন করা হয়।
উত্তর: খ. জনসংখ্যা ও উন্নয়ন এই ধারণা দুটি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি দেশের জনসংখ্যার ওপর সে দেশের উন্নয়ন অনেকখানি নির্ভর করে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জনগণের মাথাপিছু আয়ের তুলনা করলে সেটি বোঝা যায়। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনসংখ্যার কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে—যা বাংলাদেশের মতো একটি জনসংখ্যা বহুল এবং উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রযোজ্য।
আর একটি দেশ ভবিষ্যতে কতটা উন্নতি করবে, তা দেশটির অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও তার জনসংখ্যা নীতির কার্যকর প্রয়োগের ওপর নির্ভর করে।
উত্তর: গ. সাধারণভাবে দেশের জনসংখ্যা বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তাকেই দেশটির জনসংখ্যা নীতি বলা হয়। বাংলাদেশেও জনসংখ্যা নীতি রয়েছে। এ নীতির মূল দিকগুলো চিহ্নিত করা হলো—
১। দেশের সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা পৌঁছে দেওয়া।
২। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো।
৩। শিশু ও নারীর অপুষ্টির হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা।
৪। দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী, নিরাপত্তা দান করা এবং প্রসূতিদের নিরাপদ সন্তান জন্মদানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৫। সর্বোপরি থানা ও ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার সুযোগ সৃষ্টি করা।
বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে কার্যকরীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে প্রতিবছর ২ ফেব্রুয়ারি সরকারিভাবে ‘জাতীয় জনসংখ্যা দিবস’ পালন করা হয়। আর স্লোগান হচ্ছে—‘ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট’।
উত্তর: (ঘ) একটি দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে জনসংখ্যা নীতির পাশাপাশি ব্যাপক কার্যকরী পরিকল্পনা নিতে হয়। বাংলাদেশ সরকারও সে লক্ষ্যে বেশ কিছু কৌশল নির্ধারণ করেছে। সেই কৌশলগুলো হলো—
১। কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা।
২। প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে জনগণের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
৩। প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার করা।
৪। নারী শিক্ষার প্রসার করা এবং নারী স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কার্যক্রম জোরদার করা।
৫। কৃষি খাতের আধুনিকায়ন করা এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
৬। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার প্রদান করা, তাহলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অসুবিধা হবে না।
৭। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিস্তার করার যথাযথ ব্যবস্থা করা।
তাই উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি নীতি প্রণয়নের লক্ষ্য হলো নাগরিকদের জীবনমানের উন্নতি এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা। সুতরাং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর বৃত্তির ব্যবস্থা করে অধিকসংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য বিশ্বের উন্নত ও প্রযুক্তিনির্ভর দেশগুলোতে পাঠানো হলে তারা ফিরে এসে দেশের উন্নয়নে নিয়োজিত হয়ে অধিক জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে সহায়ক হবে।
Filed under: জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় | Tagged: ‘বাংলাদেশের দুর্যোগ’, অধ্যায়-৯ |
Leave a Reply