গবেষণার সহজ সূত্র

গবেষণার কাজে হাজারটা বই ঘাঁটার চেয়ে অনলাইন থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া অনেক সোজা। বইপত্র কিনতে হয় না বলে অর্থের সাশ্রয়ও হয়। এ কাজে অনেক ওয়েবসাইট থাকলেও বাংলাদেশি গবেষকদের জন্য বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইন সাইটটি অনন্য। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাংলাদেশ তরুণ গবেষণা সংঘের সভাপতি নাফিজ জামান শুভ

উন্নয়নশীল দেশে গবেষণার কাজে হরেক বাধা। অর্থের পাশাপাশি তথ্যের অভাবও অনেক। গ্রন্থাগারের সেকেলে বই আধুনিক গবেষণায় কতটুকুই বা কাজে আসে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও খুব বেশি সচেতন নয়। এত সমস্যার মাঝে যেন আশার আলো হয়ে এসেছে দাতব্য সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ফর অ্যাভেইলেবিলিটি অব সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন (ইনাস্প)। বিশ্বের আরো ২২টি উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও কাজ করছে সংস্থাটি। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া তাদের একটি প্রকল্প বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইন
(http://www.banglajol.info) এক বিরাট তথ্যভাণ্ডার! ঘরে বসে হাজার মাইল দূরের গবেষণাকর্মও এখন এক ক্লিকে দেখতে পারছেন তাঁরা। বাংলাদেশের গবেষকদের দেখতে পারছে দূরের মানুষ।

কাজ করছে ইনাস্প
১৯৯২ সাল থেকে কাজ করছে ইনাস্প। ২০০৪ সালে দাতব্য সংস্থা হিসেবে যুক্তরাজ্যে নিবন্ধন পায়। সংস্থাটি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের গবেষণার মানোন্নয়ন, বিশ্বব্যাপী গবেষণা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ায় কাজ করছে। এখন ২৩টি উন্নয়নশীল দেশে চলছে ইনাস্পের কার্যক্রম। বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইন এবং ইলেকট্রনিক রিসোর্স কনসোর্টিয়াম নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করছে সংস্থাটি।

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ জার্নালস
বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইন (http://www.banglajol.info) প্রকল্পের শুরু ২০০৭ সালে। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে এ ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত জার্নাল ছিল মাত্র ১০টি। গত সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮১টি জার্নাল এতে নিবন্ধিত হয়েছে। মোট সাত হাজার ৩৯০টি গবেষণা নিবন্ধ এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ছয় হাজার ৫২৮টি নিবন্ধ চাইলেই ডাউনলোড করা যাবে। ২০১১ সালে ১৯৯ দেশের দুই লাখ গবেষক সাইটটি ভিজিট করেন। বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইনের গবেষণা প্রবন্ধগুলো এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ বার পড়া হয়েছে।
গুগল অ্যানালাইটিকসের (Google Analytics) রিপোর্ট অনুযায়ী গত বছর বাংলাদেশের ৪৬ হাজার, ভারতের ৫৭ হাজার, যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ হাজার এবং যুক্তরাজ্যের সাড়ে ৯ হাজার গবেষক সাইটটি ভিজিট করেছেন। ২০১০-এর জানুয়ারি থেকে মোবাইলেও সাইটটি ব্যবহার করা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় আট হাজারেরও বেশি গবেষক মোবাইল ফোনে সাইটটি ব্যবহার করেছেন।

আছে বিভাগভিত্তিক জার্নাল
বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইনে চিকিৎসা (মেডিসিন এবং দন্ত) বিষয়ে ৩৮টি জার্নাল আছে। এ ছাড়া বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের ১৬টি, ফিজিক্যাল সায়েন্সের আটটি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ১৪টি জার্নাল আছে। শিগগিরই কলা অনুষদসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো অনেক বিভাগের জার্নাল এ সাইটে প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।

সেরা পাঁচ
বাংলাদেশ জার্নালসের অনলাইন ২০১১ সালের গবেষণা প্রবন্ধ ডাউনলোডের দিক থেকে সেরা পাঁচটি জার্নাল হলো_
Journal of Scientific Research
– Bangladesh Journal of Agricultural Research
Bangladesh Journal of Veterinary Medicine
– Bangladesh Journal of Scientific and Industrial Research
– Journal of the Bangladesh Agricultural University

নিবন্ধন করতে হলে
জার্নাল যদি মৌলিক গবেষণার ফল প্রকাশ করে, তবে বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। তবে জার্নালটির অবশ্যই আইএসএসএন (ISSN-International Standard Serial Number) থাকতে হবে। যেসব জার্নাল এখনো আইএসএসএন নাম্বার পায়নি, সেসব জার্নাল সম্পাদক issn.org-এ গিয়ে আইএসএসএন নাম্বারের জন্য বিনা মূল্যে আবেদন করতে পারবেন। অন্তর্ভুক্তির জন্য এ প্রকল্পের প্রধান সু কামিংয়ের (Sioux Cumming) সঙ্গেscumming@inasp.info–তে ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হবে। সবুজ সংকেত পেলে জার্নালের যে সংখ্যাটি অনলাইনে দিতে চান, তা পিডিএফ (Portal Document Format) করে পাঠাতে হবে। এ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে সম্পন্ন করা যাবে। এ-সংক্রান্ত সব খরচ ২০১৩ পর্যন্ত সার্ভার ও অন্য আনুষঙ্গিক খরচ ইনাস্প বহন করবে।

যে পথে বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইন
গত ১৮ মে ইনাস্পের প্রকাশনা বিভাগের প্রধান সু কামিং পাঁচ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কর্মশালায় অংশ নেন। এ সময় বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইন প্রকল্পটি বাংলাদেশ একাডেমী অব সায়েন্সেসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সু মনে করেন, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময় বাংলাদেশ একাডেমী অব সায়েন্সেস এ সাইটের পুরো দায়িত্ব বুঝে নিতে পারবে। এ প্রসঙ্গে একাডেমীর পরিচালক ড. এম এ মাজেদ বলেন, যেহেতু Banglajol-এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত, তাই এর মান নিয়ে কোনো আপস করা হবে না। তাই সরকারি সহযোগিতা পেলে কাজ অনেক সহজ হবে।

গবেষকরা বলেন
বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইন সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তাপস দেবনাথ বলেন, নিজের কাজ বিশ্ববাসীর কাছে পেঁৗছে দেওয়ার একটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর মাধ্যমে গবেষণার সুযোগ অনেক বেড়েছে। এখানে আমার গবেষণা যেমন সবাই দেখতে পাচ্ছে, আমিও অন্যদের গবেষণার ফল দেখতে পাচ্ছি।
এ সাইটে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানবিষয়ক আরো জার্নাল অনলাইনে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ তরুণ গবেষণা সংঘের মহাসচিব মোস্তফা মঞ্জুর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক নুসরাত জাহান বলেন, গবেষণার জন্য এত ভালো একটি উৎস আছে, তা কিন্তু অনেকেই জানেন না। সাইটটির প্রচার সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আরো বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত। এতে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন।

ইনাস্পের আরো প্রকল্প
বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইনের মতো আরো কিছু প্রকল্প রয়েছে ইনাস্পের। এসব প্রকল্প বাংলাদেশি গবেষকদের কাজে আসবে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে_
– নেপাল জার্নালস অনলাইন (www.nepjol.info)
– শ্রীলঙ্কা জার্নালস অনলাইন( http://www.sljol.info)
– ফিলিপাইন জার্নালস অনলাইন (www.philjol.info)
নেপাল জার্নালস অনলাইনে ৬৯টি, শ্রীলঙ্কা জার্নালস অনলাইনে ৪১টি এবং ফিলিপাইন জার্নালসে ৪৩টি জার্নালস রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইন প্রকল্পটির উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পারলে বিশ্বের গবেষকরা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের নামও উজ্জ্বল হবে।

Leave a comment