সারাদিনের কর্মব্যস্ত কাজের শেষে বিকালে যখন আপনি বাসায় ফিরছেন তখন হঠাত্ বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করছেন, সঙ্গে খুব ঘাম এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা। সেই তীব্র ব্যথা ক্রমাগত মুখের চোয়াল হয়ে আপনার বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ছে। আপনি খুব অস্থির অনুভব করছেন। যারা হার্ট অ্যাটাকের রোগী তাদের কাছে এই অভিজ্ঞতা খুব সাধারণ। হার্ট অ্যাটাক হলে হাসপাতালে নেয়ার আগ পর্যন্ত যদি কিছু টিপস মেনে চলা যায় তাহলে অপ্রত্যাশিত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। তাই হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের জন্য এবং যাদের হার্ট অ্যাটাকের মতো এরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে তাদের জন্য কিছু করণীয় বিষয় উল্লেখ করছি।
হার্ট অ্যাটাক হলে ভয় পাবেন না। আমাদের হার্ট যখন অপর্যাপ্ত এবং অনিয়মিতভাবে রক্ত সঞ্চালন করে তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। হার্ট অ্যাটাকের ১০ সেকেন্ডের মধ্যে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে আপনি খুব দ্রুত জোরে এবং ঘন ঘন কাশি দেবেন যেন কাশির সঙ্গে কফও বের হয়ে আসে। প্রতিবার কাশি দেয়ার আগে দীর্ঘশ্বাস নিন। এভাবে ঘন ঘন কাশি এবং দীর্ঘশ্বাস প্রতি দুই মিনিট পর পর করতে থাকুন। এতে করে আপনার হার্ট কিছুটা হলেও নিয়মিতভাবে রক্ত সঞ্চালন করবে।
হার্ট অ্যাটাকের প্রত্যেক রোগীর জন্য এই টিপস জেনে নেয়া আবশ্যক। হাসপাতালে নেয়ার আগে এই টিপস অনেকখানি সাহায্য করবে রোগীকে। কারণ দীর্ঘশ্বাসের ফলে আমাদের শরীরে অক্সিজেন পরিবহন বেশি হয়। আর ঘন ঘন এবং জোরে কাশি দেয়ার ফলে বুকে যে চাপের সৃষ্টি হয় তাতে করে হার্ট পর্যাপ্ত ও নিয়মিতভাবে রক্ত সঞ্চালনের জন্য প্রস্তুত হয়।
কেবল ত্রিশ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি নয়, বরং আজকাল জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হওয়াতে যে কারও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই সবারই এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা না হার্টের?
সাধারণত গ্যাস্ট্রিক তথা পেপটিক আলসার, ডিওডেনাল আলসার অথবা গ্যাস্ট্রাইটিসের জন্য আমরা পেটের উপরিভাগে ব্যথা অনুভব করে থাকি, যেটাকে হার্ট বার্ন বলা হয়। আরেকটা ব্যাপার হলো—এ সমস্যাটা অর্থাত্ এই স্থানে ব্যথা হার্টের সমস্যার কারণেও হয়।
হঠাত্ ব্যথার সময় আমরা বুঝি না, এটা আসলে কিসের ব্যথা। অনেক সময় দেখা যায়, সাধারণ গ্যাস্ট্রাইটিসে সমস্যার জন্য আমরা হার্টের সমস্যা ভেবে হার্টের চিকিত্সার জন্য ছুটে বেড়াই। এক্ষেত্রে কাজের কাজ কিছুই হয় না বরং আবার উল্টোটাও দেখা যায়। আবার মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশনের হার্টের ব্যথাকে সাধারণ গ্যাস্ট্রাইটিসের ব্যথা ভেবে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেও অকালে মৃত্যুর সংখ্যাও কিন্তু কম নয়!
কীভাবে বুঝবেন এটা হার্টের ব্যথা?
মনে রাখবেন, হার্টের ব্যথা সাধারণত শুরু হবে বুকের মাঝ দিক থেকে। সাধারণ এজাইনার ব্যথা হলে এটা বিশ্রাম গ্রহণেই কমে আসবে। আর এমআই’র ব্যথা হলে এটা বিশ্রাম গ্রহণে কিংবা গ্যাস্ট্রাইটিসের ওষুধ গ্রহণে কমবে না বরং এ ব্যথা চোয়ালে এবং বাম হাতে ছড়িয়ে পড়বে। সঙ্গে শরীর অনেক ঘামবে এবং বমি বমি ভাব হবে—এমনকি বমিও হতে পারে। ব্যথার ধরন হবে ‘বুকে জোরে চাপ লাগা’ অথবা ‘বুকের উপরে কোনো ভার চাপিয়ে দেয়া ধরনের।
কীভাবে বুঝবেন এটা গ্যাস্ট্রাইটিসের ব্যথা?
গ্যাস্ট্রাইটিসের ব্যথা সাধারনত পেটের ঠিক উপরের দিকে, তথা হার্টের ঠিক নিচের দিকে হয়। এ ব্যথা সাধারণত burning তথা ‘জ্বলে’ ধরনের ব্যথা হবে এবং এ ব্যথা কোনো দিকে সাধারণত ছড়াবে না, সাধারণ বিশ্রামেও এ ব্যথা কমে আসবে না। রেনিটিডিন অথবা ওমিপ্রাজল ধরনের ওষুধ সহজেই এ ব্যথা কমিয়ে দেবে।
হঠাত্ হার্টে এমআই’র ব্যথা শুরু হলে কী করবেন?
যদি এমআই’র ব্যথা শুরু হয়, তবে তাকে অতি সত্বর হাসপাতালে পাঠাতে হবে, এর আগে আপনি এসপিরিন (ডিসপ্রিন নামে পরিচিত) ট্যাবলেট চিবিয়ে খেতে দিতে পারেন, এতে সাময়িকভাবে ক্ষতির সম্ভাবনা কিছুটা কমে আসে।
Filed under: অসুখ বিসুখ | Tagged: disease, Heart |
Leave a Reply