হৃৎপিণ্ড

রূপকথার গল্পের হীরামন পাখি, যা সোনার পিঞ্জরে বন্দী, যার বাঁচা-মরার ওপর নির্ভর করে অতিকায় দৈত্যের বেঁচে থাকা। যদি কোনোভাবে রাজপুত্র হীরামন পাখিকে মেরে ফেলতে পারে, তবে রাক্ষসটিও মারা যাবে। হৃৎপিণ্ড ঠিক হীরামন পাখির মতোই আপনার বুকের খাঁচায় বন্দী আছে। সেই আপনার বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয় অক্সিজেন, পুষ্টি ও শক্তি সরবরাহের মাধ্যমে আপনাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এর কর্মতৎপরতার ওপর শক্তি, সাহস, কর্মদক্ষতা, আবেগ, অনুভূতি, জীবনের গতিসহ প্রায় সব কিছুই নির্ভরশীল। তাই এক কথায় বলা যায়, হৃৎপিণ্ড সুস্থ তো আপনিও সুস্থ। হৃৎপিণ্ড শক্তিশালী তো আপনি শক্তিশালী, হৃৎপিণ্ড দুর্বল তো আপনি দুর্বল। হৃৎপিণ্ডের প্রধান কাজ হলো রক্তসঞ্চালন করা বা পাম্পের মাধ্যমে রক্তকে নালির মধ্য দিয়ে সারা শরীরে প্রবাহিত করা। রক্তের মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্র থেকে হজম হওয়া খাদ্য উপাদান সারা শরীরে সরবরাহ হয়ে থাকে যা কারও বেঁচে থাকার জন্য একটি জরুরি প্রক্রিয়া। রক্ত ফুসফুসে প্রবাহিত হয়ে ফুসফুসের বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে সারা শরীরে সঞ্চালন করে এবং সারা দেহে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নামক বর্জ্য গ্যাস সংগ্রহ করে ফুসফুসে থাকা বাতাস পরিত্যাগ করে। তাই ফুসফুসকে মানব দেহের গ্যাসীয় পরিশোধনাগার বলা হয়। মানবদেহে বিপাকীয় কার্যকলাপের মাধ্যমে অনেক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদিত হয়ে থাকে, তার মধ্যে অধিকাংশ রাসায়নিক পদার্থই মানবদেহে বিভিন্ন কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে এসব রাসায়নিক উপকরণের একটা অংশ মানবদেহ কোনো কাজেই ব্যবহার করতে পারে না। এসব রাসায়নিক উপাদানকে রাসায়নিক বর্জ্য বলে বিবেচনা করা হয়। যাকে অন্যভাবে শরীরের জন্য বিষাক্ত পদার্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব পদার্থ মানবদেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে বিধায় তাদের শরীর

থেকে অপসারণ করা জরুরি। কিডনিতে শরীরের

এক-চতুর্থাংশ রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে। কারণ

কিডনি এসব রাসায়নিক বর্জ্য প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে অপসারণ করে থাকে। সুতরাং কিডনিকে মানবদেহের রাসায়নিক শোধনাগার বলা হয়। রাসায়নিক শোধন অল্প মাত্রায় চামড়ায়, লিভার এবং

অন্ত্রের মাধ্যমেও ঘটে থাকে।

তবে মনে রাখতে হবে, উপরোল্লেখিত সব অঙ্গের কার্যকারিতার জন্য নিয়মিত এবং পরিমিত মাত্রায় রক্তপ্রবাহ অত্যাবশ্যকীয়, যা আমাদের হৃৎপিণ্ড সম্পাদন করে থাকে।

কিভাবে বুঝবেন হৃৎপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ করছে না :

হৃৎপিণ্ডের গতি বৃদ্ধি পেলে মানে নাড়ির গতি (Heart Rate) বেড়ে গেলে, অনেকে এ সময় বুক ধড়ফড় বা প্যালপিটিশন অনুভব করে থাকে। * পরিশ্রমকালীন সহজে হাঁপিয়ে যাওয়া বা শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে যাওয়া বা কারও কারও শ্বাসকষ্ট অনুভূত হওয়া এবং কর্মক্ষমতা কমে আসা। * পরিশ্রমকালীন শরীর অত্যধিক ঘেমে যাওয়া, মাথা হালকা অনুভব

করা বা মাথা ঘোরাতে থাকা। * বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া বা বুক চেপে আসা বা বুক ভার হওয়ার মতো অনুভূত হওয়া। * শরীর ফোলা, পেট ভার,

অত্যধিক গ্যাস এবং বদহজম দেখা দেওয়া।