ফরজ নামাজের ফযীলাত

ইমাম গাযযালী (রঃ)

আল্লাহতা’লা  এরশাদ করেছেনঃ

নিশ্চয় নামায মু’মিনদের উপর নির্ধারিত সময়ে ফরয করা হয়েছে।

রাসূল (সঃ) এরশাদ করেছেনঃআল্লাহতা’লা  বান্দার উপর পাঁচটি নামায ফরয করা হয়েছে।যে তা’ আদায় করে ও তার হক হুকুক হালকা মনে করে তার কোন কিছু ছেড়ে  না দেয়, আল্লাহর তরফ থেকে তার সাথে অঙ্গীকার রয়েছে, তিনি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। আর যে এগুলো (যথাযথভাবে) আদায় না করে, তার সাথে কোন অঙ্গীকার নেই। আল্লাহ নিজের ইচ্ছে হলে  তাকে আযাব দেবেন, ইচ্ছে হলে তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। হুযুরে পাক(সঃ)আরও বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায কারও গৃহের দ্বার দেশ থেকে প্রবাহিত স্বচ্ছ সলিলা স্রোতস্বিনী তুল্য । সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে। তোমরা কি মনে কর যে, এর পরে তার দেহে কোন ময়লা থাকতে পারে? সবাই আরজ করল, না কোন ময়লা থাকতে পারেনা। হুযুরে পাক (সঃ) বললেন, পাঞ্জেগানা নামায গুনাহগার ব্যক্তির গুনাহগুলোকে এভাবে দূর করে দেয়, যেমনভাবে পানি ময়লাকে ধৌত করে ফেলে।

অপর এক হাদীসে রয়েছেঃ কবীরাহ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে পাঞ্জেগানা নামায তার মধ্যবর্তী সব গুনাহরই মাফীর কারণ হয় । আরও এরশাদ হয়েছে যে, আমাদের মধ্যে এবং মুনাফিকদের মধ্যে ব্যবধান হল, এশা ও ফজরের নামাযে শরীক হওয়া। এ দু’টো নামাযে মুনাফিকরা আসতে পারেনা।  অপর এক হাদীসে রয়েছে, যে ব্যক্তি নামায নষ্ট করে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করে, আল্লাহ তার অন্যান্য সৎকর্মের কোন মূল্য দেবেননা।  আরও এরশাদ হয়েছেঃ নামায হল, ধর্মের স্তম্ভ স্বরূপ।  যে এ নামায তরক করে, ধর্মকে ধুলিস্যাৎ করে। কেউ হুযুর পাক (সঃ)কে প্রশ্ন করেছেন , কোন আমল উত্তম? তিনি বললেন, নির্দিষ্ট সময়ে  নামায আদায় । তিনি আরও বললেন, যে ব্যক্তি   পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের হেফাজত করে, অর্থাৎ কামিল  অজু সহ যথাসময়ে নামায করে, নামায তার জন্য রোজ কিয়ামতের নূর এবং দলীল হয়ে যাবে। আর যে নামাযকে ফৌত করবে, তার হাশর হবে ফিরাউন এবং হামানের সঙ্গে। হুযুর (সঃ) বলেন যে, নামায হল, বেহেশতের চাবি। তিনি আরও বলেন, আল্লাহতা’লা তাওহীদে বিশ্বাসের পর নামাযের চেয়ে প্রিয় কোন বস্তুই মানুষের উপর ফরজ করেননি। আল্লাহর কাছে নামায অপেক্ষা কোন বস্তু থাকলে তিনি তা’ ফেরেশতাদের ইবাদত হিসেবে নির্দিষ্ট করতেন। অথচ তিনি তাদের কাছ থেকে কেবল নামাযের ক্রিয়া-কর্মই গ্রহণ করেন। আর তাই ফেরেশতাদের কেউ রুকুতে রয়েছে, কেউ সিজদায় রয়েছে, কেউ কিয়ামে মশগুল, কেউ বৈঠক রত। হুযুরে পাক (সঃ) বলেন, কেউ ইচ্ছেপূর্বক নামায ছেড়ে দিলে সে কাফির হয়ে যায়। তার অর্থ হল, সে কুফরীর নিকট চলে যায়।, কেননা এত তার দৃঢ় বন্ধন শিথিল হয়ে যায়। যেমন কোন ব্যক্তি কোন ব্যক্তি কোন শহরের একেবারে নিকটবর্তী হলে বলা হয়ে থাকে যে, সে শহরে পৌঁছে গেছে।  এক হাদীসে এরশাদ হয়েছেঃ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় নামায় তরক করে,  হযরত মুহাম্মদ(সঃ) এর জিম্মা হতে সে বের হয়ে যায়।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ যে ব্যক্তি অজু করে এবং খুব ভালভাবে অজু করে, তারপর নামাযের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে যায়, অতপর যতক্ষণ পর্যন্ত তার মনে নামাযের উদ্দেশ্য বলবৎ থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে যেন নামাযের মধ্যেই থাকে। তার একটি পদক্ষেপে একটি পূণ্য লিখা হয় এবং অন্য পদক্ষেপে একটি গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। অতএব কেবল নামাযের তাকবীর শুনেই তোমাদের নামাযের দিকে ধাবিত হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে সেই বেশি ছাওয়াব পাবে, যার ঘর বেশি দূরে। লোকগণ এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, তার নামাযের পথে বেশি পদক্ষেপ হবে। বর্ণিত রয়েছে যে, কিয়ামতে সর্বথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। নামায পূর্ণ পাওয়া গেলে অন্য আমলগুলো গৃহীত হবে। আর এটা পূর্ণ না পাওয়া গেলে অন্যান্য আমল গৃহীত হবেনা। হুযুরে পাক (সাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বললেন, তুমি তোমার গৃহের সবাইকে নামায পড়তে বল। আল্লাহ তোমাকে ধারণাতীত স্থান থেকে রুজী দান করবেন। জনৈক আলিম বলেন, নামাযী ব্যবসায়ী ব্যক্তির মত মূলধন না থাকলে তার মুনাফার আশা করা বৃথা। নামাযের সময় হয়ে গেলে হযরত আবু বকর (রাঃ) বলতেন, দাঁড়িয়ে যাও, তুমি যে আগুন জ্বালিয়েছ তা’ এবার নির্বাপিত কর। অর্থাৎ নামায দ্বারা তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত কর।

নামাযের রুকনগুলো যথাযথ  রূপে আদায় করার ফজীলত সম্পর্কে হুযুরে পাক (সাঃ) বলেনঃ যে পুরোপুরি মেপে দেবে, সে পুরোপুরি নেবে। ইয়াজিদ রাকাশী বলেনঃহুযুরে পাক (সাঃ) এর নামায মাপে সমান ছিল অর্থাৎ সব রোকন তিনি একই মাপে আদায় করতেন। হুযুরে পাক (সাঃ) বলেন, আমার উম্মতের দুটো লোক নামাযে দাঁড়ায়, তারা এইভাবে রুকু সিজদাহ করে, কিন্তু নামাযে আসমান যমিন তুল্য ব্যবধান হয়ে যায়। এ হাদীসের মাধ্যমে নামাযে বিনয় ও একগ্রতার পার্থক্যের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আরও বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তা’লা রোজ কিয়ামতে সেই বান্দার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না, যে রুকু ও সিজদার মধ্যে পিঠ সোজা করেনা। আরও বর্ণিত আছে যে,  যে ব্যক্তি নামাযে চেহারা ঘুরিয়ে দেয়, সেকি এ ব্যাপারে ভীত হয়না যে, আল্লাহ তার মুখকে গাধার মুখের মত করে দেবেন। আরও এরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি নামায যথাসময়ে আদায় করে, তজ্জন্য উত্তমরূপে অজু করে,রুকু, সিজদাহ,নম্রতা,একাগ্রতা যথাযথভাবে আদায় করে, তার সমুজ্জ্বল নামায উর্দ্ধে আরোহণ করে বলবে,তুমি আমায় যেরূপ হেফাজত করলে, তদ্রূপ আল্লাহ তোমার হেফাজত করুন। পক্ষান্তরে যে ব্যাক্তি নামায অসময়ে আদায় করে, উত্তমরূপে অজু করেনা, রুকু, সিজদাহ, নম্রতা, একাগ্রতা যথাযথভাবে আদায় করেনা, তার নামায অন্ধকার রূপ ধরে উর্দ্ধে আরোহণ করে বলে, তুমি যেমন আমার সর্বনাশ করলে, আল্লাহ পাক তোমার তেমন সর্বনাশ করুন। এরপর এ নামায আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী যথাস্থানে পৌঁছে গেলে তাকে কাপড়ের একটি পোটলার মত করে ঐ নামায  আদায়কারীর মুখে ছুড়ে মারা হয়।

হুযুরে পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেন, সে ব্যক্তিই সর্বনিকৃষ্ট চোর , যে নামাযে চুরি করে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এবং সালমান ফারসী (রাঃ) বলেন, নামায একটি ওজন করার পাল্লা বিশেষ, যে তা পূর্ণ করে দেবে, সে (তার বিনিময়েও) পূর্ণরূপে পাবে। আর যে কম করে দেবে, তার তো জানাই রয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা ওজনে কম দাতাদের সম্পর্কে কি বলেছেন?