গরমে চর্মরোগ

দাদ

 প্রথমে দাদের কথায় আসা যাক। গরম এলে শরীরে ঘাম হয় এবং শরীর ভেজা থাকে। ফলে শরীরে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস জন্মায়। মনে রাখতে হবে, ভেজা শরীরই হলো ছত্রাক জন্মানোর উর্বর ক্ষেত্র। তাই যাদের শরীরে ঘাম বেশি হয়, তারা সব সময় ঘামে ভেজা কাপড় এড়িয়ে চলবেন। কাপড় ঘামে ভিজে জবজব হয়ে আছে অথচ আপনি তা পাল্টালেন না, তাহলে আপনার শরীরে দাদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। আবার যারা শারীরিকভাবে মোটা তাদের দেহ বেশি ভেজা থাকতে দেখা যায়। সেই ভাঁজের মধ্যে ঘাম আর ময়লা বেশি জমে থাকে বলে দেহের ভাঁজযুক্ত স্থানে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস বেশি হতে দেখা যায়। ছত্রাক বা ফাঙ্গাসজনিত যেসব রোগ আমাদের দেশে দেখা যায় সেগুলোকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে—

 ১. দাদ, ২. ছুলি ও ৩. ক্যানডিডিয়াসিস

 এই তিন ধরনের ছত্রাক প্রজাতির সবই মূলত ত্বকের বাইরের অংশকে আক্রমণ করে এবং সেই আক্রমণ স্যাঁতসেঁতে, নোংরা ও ঘর্মাক্ত দেহে সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়।

 দাদ দেহের যে কোনো স্থানে দেখা দিতে পারে। যে স্থানে দেখা দেয় সেই স্থানটিতে গোলাকার চাকার মতো দাগ দেখা যায়, যার মধ্যখানের চামড়া প্রায় স্বাভাবিক আকারে দেখতে হলেও দাগের পরিধিতে ছোট ছোট গোটা দেখা যায় এবং দাগের পরিধি উঁচু বিভক্তি লাইন আকারে লক্ষ্য করা যায়। চুলকালে সেখান থেকে কষ ঝরতে থাকে। শরীরের যে কোনো স্থানে এর আক্রমণ ঘটতে পারে। তবে দেখা গেছে, সাধারণত তলপেট, পেট, কোমর, পাছা, পিঠ, মাথা, কুঁচকি ইত্যাদি স্থানে এর আক্রমণ বেশি ঘটতে দেখা যায়।

  ছুলি

 এটিও একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ। ছত্রাকের যে জীবাণু দিয়ে এ রোগটি হয় তার নাম ম্যালাছাজিয়া ফার ফার। গরমকালে এ রোগটি হয় এবং শীত এলে এমনিতেই যেন মিলিয়ে যায়। গরমে এ রোগ হওয়ার কারণ হচ্ছে ত্বক ঘামে ভেজা থাকে, ফলে ভেজা স্থানে এ রোগের জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। এ রোগে আক্রান্ত স্থানে হালকা, বাদামি, সাদা গোলাকৃতির দাগ হতে দেখা যায়। সাধারণত বুক, গলার দু’পাশ, ঘাড়ের পেছন দিক, পিঠের উপরের অংশ, বগলের নিচে এমনকি সারা শরীরেও হয়ে থাকতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত ত্বক দেখতে সাদা হয়, তাই অনেকে আবার একে শ্বেতি বলেও ভাবতে শুরু করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্বেতির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

 ঘামাচি

 গরমকালের আরেকটি বিব্রতকর রোগের নাম হচ্ছে ঘামাচি। এ রোগটি গরমকালেই হয়। শীত এলে আপনা-আপনিই রোগটি ভালো হয়ে যায়। চিকিত্সা বিজ্ঞানের ভাষায়, এই রোগটির নাম হলো মিলিয়ারিয়া। এটি একটি ঘর্মগ্রন্থির রোগ। ঘর্মগ্রন্থির নালী অতিরিক্ত আর্দ্রতা আর গরমে বন্ধ হয়ে এ রোগের সৃষ্টি করে। তবে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা থাকলে এ রোগটি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। যেমন ধরুন—কোনো ব্যক্তি যদি ঘরে, অফিসে এবং গাড়িতে এয়ারকুলার ব্যবহার করেন, তবে বলা যায় তার এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা গরমকালেও নেই। যারা তা পারেন না তাদের সব সময়ই ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকতে হবে। অর্থাত্ একটি ফ্যান অন্তত সার্বক্ষণিকভাবে মাথার ওপরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। খোলামেলা অর্থাত্ আবদ্ধ ঘর না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। গ্রীষ্মকালে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম নিঃসরণ হতে থাকে, ফলে তখনকার এত বেশি পরিমাণ নিঃসরণ ঘর্মগ্রন্থির নালীকে ফুটো করে ত্বকের নিচে এসে জমা হতে থাকে, যা পানিভর্তি ছোট ছোট দানার আকারে ফুলে উঠতে দেখা যায় এবং যা চুলকায় এবং তাতে সামান্য জ্বালাপোড়া ভাবও থাকে। মূলত এটাই হচ্ছে ঘামাচি।

 গামাচি তিন ধরনের হয়। প্রথমে আসা যায় মিলিয়ারিয়া, ক্রিস্টালিনা। এক্ষেত্রে ত্বক দেখতে প্রায় স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। দ্বিতীয়টি অর্থাত্ মিলিয়ারিয়া, রুবরার ক্ষেত্রে ঘর্মনালীতে বদ্ধতা দেখা দেয় এবং এক্ষেত্রে ত্বকের ওপর ছোট ছোট অসংখ্য গোটা হতে দেখা যায়। গোটার মাথায় পানির দানা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে এবং ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে আপেক্ষিকভাবে লালচে রঙের দেখা যায়। এক্ষেত্রে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি, যা শরীরের মূল অংশ অর্থাত্ বুক, পিঠ ও ঘাড়ে বেশি হতে দেখা যায়।

 তৃতীয়টি বা মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডার ক্ষেত্রে ঘর্মনালীর বদ্ধতা থাকে ত্বকের অনেক গভীরে। ফলে ত্বক দেখতে অনেকটা স্বাভাবিক ধরনের বলে মনে হতে পারে। এ তিনটির মধ্যে দ্বিতীয়টির আক্রমণ হয় বেশি তীব্র। একে ঐবধঃ ত্ধংয-ও বলা হয়ে থাকে। গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বেশি হয়। তেল মাখলে এ রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে। যারা এ রোগে ভুগছেন তারা গরম স্যাঁতসেঁতে ও আবদ্ধ পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজন হলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

Leave a comment